Thursday, January 22, 2015

মার্কেটপ্লেসে যেভাবে নিজেকে কমপ্লিট প্যাকেজ হিসেবে তৈরি করবেন

ফ্রিল্যান্সিং – বর্তমানে বাংলাদেশে আইটি সেক্টরে সম্ভবত অন্যতম একটি শব্দ এটি। দেশের প্রচুর ওয়েবসাইট ডেভেলপার, গ্রাফিক ডিজাইনার, রাইটার, মার্কেটার বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেসে সফলতার সাথে কাজ করছে, আবার অনেকে নতুন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে মার্কেটে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। তবে নতুনদের কাছে যে বিষয়টা প্রায়ই শোনা যায়, তা হল এই পেশায় সহজে সাফল্য পাওয়া যায়না। বিষয়টা কিছুটা হলেও সত্যি। যেকোনো একটি নির্দিষ্ট কাজের এবং ইংরেজি মাধ্যমে যোগাযোগের দক্ষতা না থাকলে আসলে এই পেশায় সাফল্য পাওয়া অনেকখানি অসম্ভব। তবে হ্যাঁ, এই দুটো থাকলেই যে সাফল্যের চুড়ায় যাওয়া যাবে, তাও ঠিক নয়। সাময়িক সাফল্য পাওয়া এবং নিজেকে একটি পেশায় প্রতিষ্ঠিত করা এক নয়। যদি লম্বা ভবিষ্যৎ ঠিক করে এই পেশায় এগিয়ে যেতে চান, তাহলে নিজেকে একটি কমপ্লিট প্যাকেজ হিসেবে তৈরি করতে হবে, যাতে শুধু কাজের দক্ষতা নয়, অন্যান্য সকল দিক দিয়ে নিজেকে আন্তর্জাতিক মানের একজন পেশাজীবী হিসেবে তৈরি করা যায়। আসুন আজকে সেটারই কিছু ধাপ নিয়ে আলোচনা করি।

মার্কেটপ্লেসের প্রোফাইল:

বর্তমানে ৪-৫টি আন্তর্জাতিক মানের ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস রয়েছে, যেখানে কাজ করে বড় ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। এই মার্কেটপ্লেসগুলোর প্রতিটিতেই একটি বিষয় কমন থাকে – সেটা হল একটি ভালো প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। সাধারণ কাজে যেমন সিভি দেখে চাকরি দেয়া না দেয়ার বিষয়টি নির্ধারণ হয়, তেমনি অনলাইন মার্কেটপ্লেসে আপনার প্রোফাইল দেখেই ক্লায়েন্ট বিবেচনা করবে আপনি কাজ পাওয়ার জন্য কতখানি যোগ্য। এর জন্য প্রোফাইলটিকে যতটুকু সম্ভব আকর্ষণীয় করে পূরণ করুন। যেগুলো না থাকলেই নয়:
  • হাসিমুখে তোলা একটি ছবি, যেখানে আপনার চেহারা পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে
  • স্কিল টেস্ট দেয়া থাকলে ভালো। ইল্যান্স.কমে ফ্রিতেই প্রচুর স্কিল টেস্ট দেয়া যায়। স্কিল টেস্ট দেয়া থাকলে ক্লায়েন্ট বুঝবে যে আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নতুন অথবা অভিজ্ঞ যাই হোন না কেন, সেই স্কিলে আপনার যথেষ্ট তাত্ত্বিক জ্ঞান আছে
  • পোর্টফলিও আইটেম অ্যাড করা উচিৎ। পোর্টফলিও আইটেম হিসেবে নিজের তৈরি লোগো, নিজের বানানো ওয়েবসাইটের স্ক্রিনশট, ইউনিভার্সিটিতে তৈরি করা কোন প্রেজেন্টেশন, কোন সার্টিফিকেটের স্ক্যান করা ইমেজ, ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে। এর সাথে যদি স্কিল টেস্ট থাকে, তাহলে ক্লায়েন্ট যেনে যাবে, যে আপনার শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞান আছে তাই নয়, তার সাথে প্র্যাক্টিকাল কাজ করার অভিজ্ঞতাও আছে।
  • আপনার একাডেমিক হিস্ট্রি (কোথায় পড়াশোনা করেছেন, কি ডিগ্রি আছে, ইত্যাদি) আপনার প্রোফাইলে আপডেট করুন। একই সাথে যদি কোন জব হিস্ট্রি থাকে সেটাও দিয়ে দিন।
বিষয়টি অনেকটা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করার মত। একদম খালি একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দিয়ে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠালে যেমন কেউ আপনাকে সহজে অ্যাড করবে না, ঠিক তেমনি একদম খালি, অনাকর্ষণীয় একটি ফ্রিল্যান্স প্রোফাইল তৈরি করে কাজে আবেদন করলে ক্লায়েন্টরাও সাড়া দিবে না।

ক্লায়েন্টের কাছে কাজের আবেদন করা:

যখন কোন কাজে আবেদন করবেন, অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন আপনার লেখার ধরন প্রফেশনাল হয়। কখনই, কখনই কপি-পেস্ট করে আবেদন পাঠাবেন না। এটা করলে কাজ পাওয়া দুরহ তো হবেই, বরং অনেক ক্লায়েন্ট আপনার লেটার স্প্যাম হিসেবে মার্ক করলে মার্কেটপ্লেসের অ্যাকাউন্টটি হারাতে পারেন আপনি। যেটা করা উচিৎ সেটা হল প্রতিটি জব ভালোভাবে পড়ে, তারপর চিন্তা করে গুছিয়ে একটি লেটার লিখে পাঠানো। এক্ষেত্রে আপনি একটি ফরম্যাট ফলো করতে পারেন, যেমন:
  • Hello, Good Day, Good Morning অথবা Evening, ইত্যাদি দিয়ে শুরু করতে পারেন (Dear Sir/Madam, Dear Manager, ইত্যাদি না দিলেই ভালো)
  • তারপর এক লাইন আপনি তার কাজের বিষয়ে কোন প্রশ্ন করতে পারেন, এক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট বুঝবে আপনি তার জবটি পড়েছেন
  • তারপর ২-৩টি লাইন লিখুন আপনার কোন স্কিলটি তার প্রোজেক্টে কাজে আসবে, এবং কেন
  • তারপর ৪-৫টি বুলেট পয়েন্ট করে লিখুন আপনি তার কাজটি পেলে কি কি ধাপে করবেন
  • আপনি কোন ফাইল এটাচ করে থাকলে উল্লেখ করুন
  • এবং সর্বশেষে ধন্যবাদ দিয়ে আপনার লেটার শেষ করুন
এভাবে একটি ফরম্যাট ফলো করলে দেখবেন কখনই কপি-পেস্ট করতে হবে না। তবে হ্যাঁ, দুটি ব্যাপার কখনই করবেন না – একটা হল লেটারে নিজের ইমেইল অথবা যোগাযোগের কোন আইডি উল্লেখ করবেন না, এবং কখনই আপনাকে যেন কাজটি দেয় এটা নিয়ে জোর করবেন না। নাহলে ক্লায়েন্ট আপনাকে আনপ্রফেশনাল ভাবতে পারে।

এছাড়া আবেদনের ক্ষেত্রে কখনই খুব কম প্রাইসে বিড করবেন না। ১৫টার একটি পানির বোতল যদি আপনার কাছে ৫টা চায়, তাহলে যেভাবে সেটা কিনতে আপনার সন্দেহ হবে, তেমনি খুব কম প্রাইসে কাজে বিড করলে আপনার যোগ্যতা এবং দক্ষতা নিয়েও ক্লায়েন্টের সন্দেহ হবে। মার্কেট যাচাই করুন, অন্যান্য ফ্রিল্যান্সারদের প্রোফাইলে দেখুন তাদের রেট কত, তারপর নিজের একটি স্ট্যান্ডার্ড প্রাইস সেট করুন।

গুগল, গুগল, এবং গুগল:

সর্বশেষে না বললেই নয়, গুগলকে নিজের সবচেয়ে কাছের বন্ধু বানিয়ে ফেলুন। যেকোনো সফল ফ্রিল্যান্সারকে জিজ্ঞেস করলেই দেখবেন, প্রত্যেকেই বলবে তারা অনেক কিছু গুগল সার্চ করে জেনেছে। বিষয়টি আসলেই সত্যি। আমরা অনেক সময়ই অনেক ধাপে আটকে যাই, তখনি গুগল সার্চ করুন, দেখবেন প্রচুর রিসোর্স ইতিমধ্যে অনলাইনে আছে যা আপনাকে সাহায্য করবে। প্রোফাইল কমপ্লিট করতে পারছেন না? গুগলে গিয়ে সার্চ দিন, “How to complete Elance profile”। প্রপোজাল লেটার লিখতে সাহায্য দরকার? গুগলে সার্চ দিন, “How to write a perfect Elance proposal”। ফটোশপে কাজ করতে গিয়ে আটকে গিয়েছেন, গুগলে গিয়ে Photoshop Help অথবা Photoshop Tutorial Video লিখে সার্চ করুন, দেখবেন হাজার হাজার রিসোর্স আছে সাহায্যের জন্য। যেহেতু আমরা মুক্ত-পেশাজীবী হিসেবে নিজেকে গঠন করতে চাচ্ছি, নিজে থেকেই প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে বের করাটাও আমাদের আয়ত্ত করতে হবে।

এভাবে যদি নিজের ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার শুরু করেন, তাহলে আশা করা যায় খুব কম সময়েই সফলতা পাবেন, এবং সেটি দীর্ঘস্থায়ী হবে। তবে হ্যাঁ, শুরুতেই যেটা বলেছি, নির্দিষ্ট কোন কাজের এবং ইংরেজি মাধ্যমে যোগাযোগের দক্ষতা দরকার, সেটা কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না!

সাইদুর মামুন খান
কান্ট্রি ম্যানেজার, বাংলাদেশ
ইল্যান্স.কম

No comments:

Post a Comment